সুনামগঞ্জ , মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ২২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
হাওরের পানি নিষ্কাশনের ১২ রেগুলেটর অকেজো ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ, শাল্লায় লেজেগোবরে পিআইসি সুনামগঞ্জ-৪ আসনে অ্যাড. নূরুল ইসলামকে প্রার্থী করার দাবি ধর্মপাশায় ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার ধর্মপাশায় বাঁধের কমপেকশন সঠিকভাবে হয়নি, পিআইসি’র সভাপতিকে শোকজ হাওরের পরিকল্পিত উন্নয়নে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি দেখার হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধে ধস নাটক ‘হা হা কার’ মঞ্চস্থ টাঙ্গুয়ার হাওরে ২৪টি নিষিদ্ধ রিং জাল জব্দ সুনামগঞ্জ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সম্পন্ন গুম-খুনের বিচার অগ্রাধিকার দিয়ে করতে হবে: ডা. শফিকুর রহমান হাওরে ইজারা প্রথা বন্ধের দাবি সীমান্তে ৮৫৫ বোতল ভারতীয় মদ জব্দ ধর্মপাশায় ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার কৃষি ব্যাংক, সুনামগঞ্জ মুখ্য অঞ্চলের অর্ধবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত জেলা জাপা’র নবনির্বাচিত আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ককে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন ইব্রাহিমপুরে ছুরিকাঘাতে ইউপি সদস্য আহত কবি নাসের রাজার জন্মদিন পালন করলো সুনামকণ্ঠ সাহিত্য পরিষদ প্রফেসর সৈয়দ মহিবুল ইসলামকে সংবর্ধনা দিল জলকন্যা সাহিত্য পরিষদ সর্ববৃহৎ সমাবেশের মাধ্যমে সুনামগঞ্জে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে চায় দলটি

ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ, শাল্লায় লেজেগোবরে পিআইসি

  • আপলোড সময় : ০৪-০২-২০২৫ ১২:১৫:৫৯ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৪-০২-২০২৫ ১২:৩২:৪৪ পূর্বাহ্ন
ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ, শাল্লায় লেজেগোবরে পিআইসি
জয়ন্ত সেন ::
শাল্লায় ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনে লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি হয়েছে। কোথাও টাকা নিয়ে পিআইসি গঠনের অভিযোগ, কোথাওবা একই পরিবারের একাধিক সদস্য, আবার কোনো কোনো পিআইসিতে আপন ভাইয়ের পিতার নাম ভিন্ন ভিন্ন! অন্যদিকে জমি নেই এমন লোকজনদের সভাপতি করে তাদের নামে দেয়া হয়েছে পিআইসি, কোথাও আবার পিআইসিতে স্কুলের দপ্তরির নাম রয়েছে। অপরদিকে বেশকিছু পিআইসিতে কুশিয়ারা নদীর পাড় কেটে বালুমিশ্রিত মাটি ফেলা হচ্ছে বাঁধে। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে শতাধিক পিআইসির বিরুদ্ধে জমা পড়ে অভিযোগের স্তূপ। এমনকি অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করার অভিযোগও উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে উপজেলা কাবিটা স্কীম ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিবের দিকে উঠেছে অভিযোগের তীর। ছায়ার হাওর উপ-প্রকল্পের আওতায় ৩৭নং পিআইসির সভাপতি প্রসেনজিৎ দাস বলেন, এই পিআইসি আমাকে দিছে। আমরা ৪০ভাগ কাজও করছি। পরে এসও মোটা অংকের টাকা খাইয়া অন্যদের দিয়া দিছে পিআইসি। ওই প্রকল্পের সদস্য সচিব রিপন চন্দ্র দাসও একই কথা বলেন। একই হাওরের ৪৪নং পিআইসির আবেদনকারী সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, এই পিআইসি ইউএনও, এসও স্যার আমারে দিছে। এই পিআইসি আবার ১৮তারিখ (জানুয়ারি) এসও টাকা খাইয়া মেহেদিরে দিয়া দিছে। আমি ৬০ পার্সেন্ট কাজ করার পরে বাধা বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। এই অবস্থা চলছে উপজেলায়। অন্যদিকে ভান্ডাবিল হাওর উপ-প্রকল্পের আওতায় ৭৯নং পিআইসির সভাপতি বিমল দাস একজন টমটম চালক। ভান্ডাবিল হাওরে একটুকরো জমি নেই তার। তবুও তিনি ওই প্রকল্পের সভাপতি। অথচ ভান্ডাবিল হাওরের প্রকৃত কৃষকরা বলছেন প্রতি বছরই তারা পিআইসির জন্য আবেদন করেন। কিন্তু তাদের পিআইসি দেয়া হয়না। আঙ্গারুয়া গ্রামের বাসিন্দা কমরেড শ্রীকান্ত দাসের বড় ছেলে দুরন্ত দাস বলেন, এই হাওরে আমার জমি আছে ২০ কেয়ার। আমার জমি বিনাশ করে প্রতি বছরই পিআইসির বাঁধ দেয়া হয়। আমি প্রতি বছরই আবেদনও করি। কিন্তু আমাকে পিআইসি দেয়া হয় না। অথচ বাড়ি তৈরি করার জন্য আমার কাছ থেকেই ১ কেয়ার জায়গা কিনেছে তারা। বিমল দাসের বাড়ি আনন্দপুর। এই জায়গায় এবছর তারা নতুন বাড়ি করে বসবাসও করছে। কিন্তু টমটম চালক বিমল দাস কীভাবে পিআইসির সভাপতি হয়? তিনি বলেন, এর পেছনে রয়েছে এক সাংবাদিক। তার ছোটভাই নিতেশ দাসকে ওই প্রকল্পের সদস্য সচিব করা হয়েছে। প্রতি বছরই সে এই পিআইসি নেয় নানা কৌশলে। তাছাড়া এবছর এই পিআইসির কোনো প্রয়োজন ছিল না। এই পিআইসি এবছর অযথা দেয়া হয়েছে। আনন্দপুর গ্রামের বড় কৃষক সুবোধ দাশ বলেন, আমার এখানে জমি আছে ৩০ কেয়ার। আমিও গত বছর আবেদন করেছিলাম। না পেয়ে লজ্জায় আর আবেদন করিনি। তবে দোষটা বিমলের নয়। তাছাড়া এবার এখানে পিআইসির দরকার ছিল না বলে জানান তিনি। একই হাওরের আরেক কৃষক জিতেন্দ্র রায় বলেন, আমার ওই হাওরে জমি আছে ২০ কেয়ার। আমিও গত বছর আবেদন করেছিলাম। আমাদের পিআইসি দেয়া হয়না। যেহেতু তাদের বাড়ি নেই, তাই বিমল দাসকে আমিই জমি কিনে দিয়েছি দুরন্ত দাসের নিকট থেকে। তাদের বাড়ি ছাড়া ওইখানে আর জমি নাই। এখানে বিমলকে শুধুই ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে এবছর পিআইসির প্রয়োজন ছিল না বলে তিনিও জানান। নয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব রামানন্দ দাসের ছেলে রুবেল দাস বলেন, সভাপতি বিমল দাসের জমি নাই। নতুন জায়গায় বাড়ি করার কাগজ দিয়া পিআইসি আনছে। সেক্রেটারি নিতেশ দাসেরও জমি নাই। একথা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি। ইউএনও, এসও’র যোগসাজশে এই পিআইসি দেয়া হয়েছে। আমি এই পিআইসির বিরুদ্ধে অভিযোগ করবো। অভিযোগের বিষয়ে বিমল দাস বলেন, গোবরেরও পদ্মফুল ফুটে! যাদের মাথা আছে তারাই পারে! তবে নতুন বাড়ির কাগজ ছাড়াও বন্ধকি জমি ওই হাওরে আছে। জমি আছে নিতেশ দাসেরও। তবে সাংবাদিক তাতে জড়িত নয় বলে দাবি তার। অন্যদিকে ভান্ডাবিল হাওরের ৭৮নং পিআইসির সভাপতি বলেন, এটি ঝুমনের পিআইসি! ঝুমন আমারে দিছে। এসও’র সাথে ঝুমনের যোগাযোগ আছে। উপরে ঝুমনের লোক আছে। কোন ঝুমন জানতে চাইলে তিনি বলে ওইযে, আলোচিত ঝুমন দাস! এরপূর্বে ‘শাল্লায় টাকার বিনিময়ে পিআইসি’ শিরোনামে ৭৮নং পিআইসির বিরুদ্ধে অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর ওই কমিটিকে বাতিল করা হয়। সেখানে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। ৭৮নং প্রকল্পের সভাপতি করা হয় নয়াগাঁও গ্রামের কৃপেশ চন্দ্র দাশকে। অন্যদিকে ওই প্রকল্পের সদস্য সচিব গোপি কান্ত দাশ বলেন, আমারে সাংবাদিকে সুপারিশ করছে। কিন্তু সমস্যা হলো আমার পিআইসির সভাপতি! আরেক সাংবাদিক বলেন, এবছর সাংবাদিকদের ১০টি পিআইসি দেয়া হয়েছে। এসবের খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, কেউ নিজ নামে, কেউ আবার ভাইয়ের নামে, কেউ বা আবার বাবার নামে, কেউ শ্যালকের নামে কেউবা আবার ধরাছোঁয়ার বাইরে গিয়ে নিজেদের পছন্দের লোক কমিটিতে রেখেছে। সচেতন কৃষকরা বলছেন, জনপ্রতিনিধিরা না থাকায় ইচ্ছেমতো পিআইসি নেয়ার সুযোগ পেয়েছে অকৃষকরা। আর এসবের সুবিধা নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন। যেকারণে পিআইসি বণ্টন লেজেগোবরের মতো অবস্থা হয়েছে। বাঁধের কাজও চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ৭৯নং পিআইসির বাঁধে এলোমেলোভাবে মাটি ফেলা হয়েছে। কোথাও ৬ ইঞ্চি কোথাও এক ফুট। ভাসাভাসা কাজ হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। এটি না দিলেও হাওরের কোনও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানান কৃষকরা। এসব দুর্নীতি-অনিয়মের তদন্ত করে অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে হাওর বাঁচাও আন্দোলন উপজেলা কমিটি। এবিষয়ে মুঠোফোনে উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা (এসও) রিপন আলী বলেন, ৭৯নং পিআইসির বিষয়টি আপনি তো এখন বললেন, আমি তদন্ত করে দেখব। অন্যদিকে ৪৯নং প্রকল্পের দপ্তরিকে পিআইসিতে রাখা না রাখার বিষয়টি নীতিমালায় উল্লেখ নাই বলে যুক্তি এই কর্মকর্তার! ঝুমন দাস এলাকায় না থেকেও কীভাবে পিআইসি নেয় এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পুরনো কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি দেয়া হয়েছে। তবে ঝুমন দাশের বিষয়টি তিনি জানেন না বলে জানান তিনি। এদিকে, অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঝুমন দাসের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে নবাগত ইউএনও পিয়াস চন্দ্র দাস বলেন, আমি নতুন এসেছি। পিআইসি গঠন হয়েছে আমি আসার পূর্বে। তবে এসব অভিযোগগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি। উল্লেখ্য, ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে ৮৪ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার কাজের জন্য প্রায় ২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এর বিপরীতে পিআইসি গঠন করা হয় ১১৫টি।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
হাওরের পানি নিষ্কাশনের ১২ রেগুলেটর অকেজো

হাওরের পানি নিষ্কাশনের ১২ রেগুলেটর অকেজো